সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মুডি কিশোর!

রাজার যেমন মেজাজটাই আসল, শিল্পীর তেমনি খেয়াল। ইংরেজিতে, মেজাজকে মুড বলা হলেও শিল্পীর মুড বলতে শুধু তার মেজাজ বোঝায় না। শিল্পীর ক্ষেত্রে মুড কথার ব্যপ্তি অনেক। রাজার মেজাজ যেমন রাজসিক আভিজাত্যের নিরিখে বিচার্য, শিল্পীর মুড তেমনি সব কিছু হারানোর পরেও আপন খেয়ালের কাছে বলিপ্রদত্ত। খেয়াল সর্বস্বতাই শিল্পীর মুডের আসল রহস্য। জাত শিল্পী মাত্রেই তারা তাঁদের খেয়ালের দ্বারা পরিচালিত হন, খেয়ালের কথায় ওঠেন বসেন। পৃথিবীর তাবড় শক্তিও হার মানে তাঁর সেই অপরাজেয় এবং অপ্রতিরোধ্য ও অবাধ্য খেয়ালের কাছে। শিল্পী বেঁচে থাকেন তাঁর খেয়াল নিয়ে।


নানা মুডে কিশোর কুমার।

এমনই এক শিল্পী ছিলেন কিশোর কুমার। প্রতিভার দিক থেকে তিনি ছিলেন এক এবং অদ্বিতীয়।  তাঁর কণ্ঠ, গায়কী, অভিনয়, চিত্র পরিচালনা, প্রযোজনা, গান রচনা থেকে সুরারোপ করা –চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে কিশোর কুমার তাঁর প্রতিভার মহিমা দেখাননি। একজন প্রকৃত কিংবদন্তী বলতে যা বোঝায় কিশোর কুমার ছিলেন তাই। কিশোর কুমারের শিল্পী সত্তার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে তাঁর জগত বিখ্যাত সব মুডের ইতিবৃত্ত। যিনি অবলীলায় বলতে পারেন, লোকে আমাকে পাগল বলে, আর আমি দুনিয়াকে পাগল বলি।   যিনি মজা করে নিজের নামের সঙ্গে তাঁর জন্মভূমি - মধ্যপ্রদেশের খাণ্ডোয়ার নাম জুড়ে নিজেকে কিশোর কুমার খাণ্ডোয়াওয়ালা বলে পরিচয় দেন, তিনি যে তাঁর খেয়াল মেনেই চলবেন সে কথা বিশেষ বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। যিনি মঞ্চ থেকে মাইক হাতে উপস্থিত শ্রোতাদেরকে, নানা- নানি, দাদা-দাদি, কাকা-কাকি, মামা-মামি বলে সম্বোধন করে তাঁর ‘পেয়ার ভরা নমস্কার’ জানান তাঁকে আর যাই হোক চেনা সুরে ঢালা সম্ভব নয়। 
 তিনি কিশোর কুমার, তাই পূজার গানে দিব্যি গীতিকার শিবদাস মুখোপাধ্যায়কে অনুপ্রাণিত করেন নিজের পদবীকে  (গাঙ্গুলী) নিয়ে পর্যন্ত মজা করতে – ‘
মুখার্জি নয় ব্যানার্জি নয় চ্যাটার্জী নয় গ্যাঙ্গারজি’ বলে।  কিশোর কুমার তাঁর প্রথম স্ত্রী রুমা গুহঠাকুরতার সঙ্গে বিচ্ছেদের (১৯৫৮) পরে একটা আস্ত Morrison Minor গাড়ি কে তাঁর বোম্বের বসতবাটি ‘গৌরী কুঞ্জ’ এর নীচে পুঁতে ফেলেন।  পুত্র অমিত কুমার একটি সাক্ষাতকারে এই কথা স্বীকার করে বলেন, যেহেতু এই গাড়ি কিনতে তাঁর মা রুমা দেবী অর্থ  সাহায্য করেছিলেন তাই কিশোর কুমারের এমন সিদ্ধান্ত।
কিশোর কুমারই পারেন স্টুডিওতে চায়না সিল্কের লুঙ্গি আর পাঞ্জাবী পরে আসতে। বলিউডি চলচ্চিত্র সঙ্গীতের বিখ্যাত গীতিকার অনজানের পুত্র সমীর, যিনি নিজেও গীতিকার হিসেবে অনেক খ্যাতি অর্জন করেছেন, একটি সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমারের বিচিত্র খেয়ালের কথা বলতে গিয়ে বলছেন, সেটি ছিল তাঁর কিশোর কুমারের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের দিন। যেদিন স্টুডিওতে কিশোর কুমার তাঁর দু পায়ে দু রকমের জুতো পরে এসেছিলেন; ডান পায়ে, নিজের জুতো আর বাম পায়ে ছিল তাঁর স্ত্রীর জুতো। শুধু তাই নয়, চোখে পরে এসেছিলেন, চওড়া পোঁচের  সুরমা।
তিনিই পারেন, একসাথে মহিলা এবং পুরুষ উভয়ের কণ্ঠে গান গেয়ে দিতে।  এবং তা করেন একান্ত অবলীলায়। ১৯৬২ সালে তৈরি ‘হাফ টিকিট’ ছবিতে সলিল চৌধুরীর সুরে এই গানটি (আকে সিধি লাগে দিল পে) গাওয়ার কথা ছিল তাঁর এবং লতা মঙ্গেশকর দুজনের।  কোনো জরুরী কারণে লতা মঙ্গেশকর সেদিন আসতে পারেননি। চিন্তান্বিত সলীল চৌধুরীকে সেদিন মুশকিল আসান হয়ে লতার অংশটিও একসাথে গেয়ে দেবার কথা বলেন কিশোর কুমার। বলাই বাহুল্য, গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে, এবং আজও বিভিন্ন গানের রিয়েলিটি শো'তে এই গানটিকে গেয়েই নিজেদের গাইয়ে কুশলতা প্রমান করার চেষ্টা করেন গানের প্রতিযোগীরা। 
কিশোর কুমার, যিনি কিংবদন্তী কণ্ঠ শিল্পী কুন্দনলাল সায়গলকে তাঁর গুরু মানতেন, এবং ছোটকাল থেকে যার গাওয়া গান গেয়েই বড় শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন, সেই তিনিই সায়গলের গানকে রেকর্ড করার প্রশ্নে, শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েও পিছিয়ে আসেন, সম্পূর্ণ অন্য একটি কারণে।  ১৯৭৭ সালে, মিউজিক কোম্পানি সারেগামা কে কথা দিয়েছিলেন, তাঁর প্রিয় কিছু সায়গলের গান ক্যাসেটবন্দী করবেন বলে। কিন্তু রেকর্ডিং এর আগের দিন রাতে, আচমকা মত বদল করেন তিনি। মুডি কিশোর কুমারের এটি ছিল মুড হারিয়ে ফেলার একটি বেনজির এবং উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত।  ছেলে অমিত কুমারের কাছে তিনি অকপটে ব্যক্ত করেন তাঁর এই গ্রেট মুড সুইং এর নেপথ্য কারণ। কিশোর কুমারের আশঙ্কা ছিল, গানগুলি যদি কোনোকারণে তিনি সায়গলের থেকেও ভালো গেয়ে দেন তাহলে গুরু হিসেবে সায়গলকে অসম্মানিত করা হবে।
মুড কি শিল্পীকে জিদ্দি এবং একরোখা করে দেয়! এমনকি তাতে তাঁর সর্বস্ব হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকলেও, তিনি তার পরোয়া করেন না।  সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, দেশে ইমারজেন্সী জারির (১৯৭৫, ২৫ শে জুন -১৯৭৭) ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে, সেই সময়ে কিভাবে মানুষের স্বাধীন মতামতের অধিকারকে খর্ব করা হয়েছে সে কথার উল্লেখ করেছেন; এই প্রসঙ্গে উদাহরণ হিসেবে স্বনামধন্য কণ্ঠশিল্পী কিশোর কুমারের গানের ওপর দীর্ঘ একবছরের জন্য বলবৎ হওয়া নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার বিষয়টি পুনরায় সামনে চলে এসেছে।   
ঘটনাচক্রে, ইমারজেন্সী জারির ঠিক ন' দিনের মাথায়, ৪ ঠা জুলাই (১৯২৯) কিশোর কুমারের জন্মদিন পড়ে যাওয়ায়, নিষেধাজ্ঞা জারি এবং সর্বোপরি কিশোর কুমার, কিভাবে সেই সময়ের স্বৈরাচারী সরকারের রক্তচক্ষু কে অবজ্ঞা করেও নিজের সিদ্ধান্তে অনমনীয় ছিলেন তাই নিয়ে, ফের একবার জোর চর্চা শুরু হয়েছে। পুত্র অমিত কুমার, সাংবাদিক ভিকি লালওয়ানিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তাঁর পিতার অদম্য জেদের কথা - খোলাখুলি ভাবে ব্যক্ত করেছেন । ইমারজেন্সী চালু হওয়ার এক বছরের মাথায়, (১৯৭৬) দেশের তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রক থেকে এক উচ্চ পদাধিকারিক, ফোন করেন কিশোর কুমারকে। ফোন করে, দিল্লিতে সঞ্জয় গান্ধী ফ্লাইং ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক রাজনৈতিক কর্মসূচীতে গান করার অনুরোধ জানালে, কিশোর কুমার সরাসারি তাঁকে না করে দেন। আত্মসম্মানী কিশোর কুমার বলেন, এইভাবে টেলিফোন মারফৎ খবর দিলে তাঁর পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। কিশোর কুমার, তাঁর বাড়িতে আমন্ত্রন পত্র সহ কাউকে পাঠাতে বলেন। ফোনকারী অফিসার তখন তাঁকে জানান, এটি তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রকের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী বিদ্যাচরন শুক্লের নির্দেশ। উত্তরে, কিশোর কুমার সপাট তাঁকে জানিয়ে দেন, স্বয়ং ঈশ্বরের নির্দেশেও তিনি যেতে বাধ্য নন। তাতে অফিসার, ফোনেই তাঁকে ব্যান করার হুমকি দেন। কিন্তু কিশোর কুমার অনড় ছিলেন। এবং যার ফল ফলেছিল মারাত্মক।  ৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারী সমস্ত ব্রডকাস্টিং সিস্টেম (আকাশবাণী ও দূরদর্শন) থেকে সম্প্রচারিত তাঁর গানের ওপর এক বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা লাগু হয়ে যায়।
তিনি কিশোর কুমার, তাই ইমারজেন্সী চলাকালীনই মেদিনীপুরে অনুষ্ঠিত এক স্টেজ শো'য়ে তিনি হাজির থেকেও গান গাইতে অস্বীকার করেন। সেদিন যে তাঁর গান গাওয়ার মুড ছিল না, সেকথা অবশ্য কোথাও বলেননি। কিন্তু সকলে বুঝে গিয়েছিল এটা তাঁর মুড বদলের নয়া উপাখ্যান ছাড়া কিছু নয়। আয়োজক সংস্থাকে যদিও, কিশোর কুমার জানিয়েছিলেন, আসার সময় - পথের ধুলো বালিতে তাঁর গলা চোক করে গেছে। তাই তিনি গাইতে পারবেন না। যা গাওয়ার অমিতই গাইবে। প্রসঙ্গত, কিশোর কুমারের সঙ্গে সেদিন পুত্র অমিত কুমারও উপস্থিত ছিলেন ওই অনুষ্ঠানে।
কিশোর কুমারের মুড কিস্সা যেন রূপকথার মিথ, যার রূপোলী মোড়কে লেগে থাকা চোখ ধাঁধানো জেল্লা যেন কিছুতেই বিচ্ছিন্ন হতে চায় না।  কিশোর কুমারের মুড বৃত্তান্তের পরতে পরতে সঞ্চিত থাকে রোমাঞ্চকর সব কাহিনীর উপকথা। যেমন একবার লন্ডনে গিয়ে, কিশোর কুমার, বলিউডের কুখ্যাত ভিলেন অমরিশ পুরী কে পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে গান গাইতে বাধ্য করেছিলেন। ভাবুন একবার, 'মিস্টার 
ইন্ডিয়া’ ছবির গান দ্বৈত কণ্ঠে গাইছেন অমরীশ পুরী আর কিশোর কুমার, দুজনে একসাথে। অমরিশ পুরী নিজেই সে কথা জানিয়েছেন এক সাক্ষাৎকারে।   

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন; যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় হয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে; মাত্র চার বছর বয়সে পড়া - যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি তিনি মুক্ত হতে; ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন, ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইনের কথা - সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘ...

জনগণমনঃ জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার ইতিহাস ও কিছু প্রশ্নের উত্তর!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ব্রহ্ম সঙ্গীত ‘ জনগণমন অধিনায়ক’ কে দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মান্যতা দেওয়ার সর্ব সম্মীলিত সিদ্ধান্ত হয় ১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি । কিন্তু কেন এত দেরী? দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও কেন তিন বছর সময় লেগেছিল জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করতে? ‘ভারত বিধাতা’ শিরোনামে লেখা, স্বদেশ পর্যায় ভুক্ত (গীতবিতান অনুসারে) এই রবীন্দ্রগীতিটি কিভাবে -  দেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার পথে একটু একটু করে এগিয়ে গেল! ‘জনগনমন’র জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনীই আজ আমরা ফিরে দেখবো এই প্রবন্ধে।  ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট - দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরে অবশেষে দেশবাসীর ভাগ্যাকাশে এসে উপস্থিত হোল বহু আকাঙ্খিত সেই দিনটি। উদিত হোল স্বাধীনতার নতুন সূর্যের।   স্বাধীন হোল দেশ। কিন্তু সদ্য ব্রিটিশ অধীনতা মুক্ত দুটি দেশ ভারত এবং পাকিস্থান তখনও পায় নি স্বতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা। ১৯৪৭ এর ১৮ই জুলাই তারিখে লাগু হওয়া ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুসারে নিজ নিজ সংবিধান প্রণয়নের আগে পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্থান এই দুটি ভূখণ্ড কমনওয়েলথ দেশের অধীনস্থ দুটি অধিরাজ্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারা...