সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

৭৭ তম স্বাধীনতা দিবসের ভোরে, বাজারের পথে এই অধীন!

৭৭ তম স্বাধীনতা দিবসের ভোরে, সাইকেল চালিয়ে বাজারে যাচ্ছিলাম। মোড়ে, মোড়ে ফুল-মালায় সুসজ্জিত বেদীতে উত্তোলিত হচ্ছিল ত্রিবর্ণ পতাকা, দারুন সাড়ম্বরে। চারদিক - মুখরিত করে, মাইকে তারস্বরে বাজছিল 'হর ঘর ত্রিরঙ্গা' গান। 


হয়তো বা আজকের দিনে, ঘরে ঘরে ত্রিরঙ্গা উড়ছে পত পত করে, কিন্তু ঘরের মধ্যেকার সুখদুঃখগুলো, হাসিকান্নাগুলো, অভাব-অভিযোগ গুলো কি চাপা পড়ে যাচ্ছেনা ত্রিরঙ্গা পতাকার আড়ালে?  যারা ঘরের বাইরে - বেঘর, যারা ফুটপাথে, যারা শরণার্থী শিবিরে অথবা যারা যাযাবর তারা কি ত্রিরঙ্গার এই আদিগন্ত দোল খাওয়া তরঙ্গ ধারায় নিজেদের একাত্ম করবে না? 
মনে হল, ত্রিরঙ্গাকে আরো - সেই সব নিভৃতজন, সেই সব অব্যক্ত অনুভূতিদের নামে উৎসর্গীকৃত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। 
যেতে যেতে, পথে এক সুন্দরী মহিলার গালে, তার বান্ধবী কে ত্রিরঙ্গার ছবি সেঁটে দিতে দেখলাম, পরম যত্নে। কিন্তু কোথাও যেন সেই সুন্দর মুখের আড়ালে একটা দুর্বোধ্য দুঃখবোধ, গালে মাড়ানো ত্রিবর্ণ পতাকার ছবিটিকে, আনন্দের সঙ্গে তাকে বহন করে নিয়ে যেতে দিচ্ছে না। মনে মনে তাই সর্বেশ্বরের কাছে - রবি ঠাকুরের গানের ভাষায় প্রার্থনা জানাই, "তোমার পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শকতি" 
নীচের 'হর গাল ত্রিরঙ্গা' নামাঙ্কিত কবিতাটি, তাই জীবনের সব গলি থেকে সব গালকে ছুঁয়ে যাওয়ার এক ছোট প্রচেষ্টা হিসেবে উপস্থাপিত হল এই পরিসরে। 


 হর গাল ত্রিরঙ্গা!
দেবাশিস জানা

মনিপুর থেকে মহারাষ্ট্র
হর ঘর ত্রিরঙ্গা!
বাউল থেকে ম্যাইস্ত্রো
হর স্বর ত্রিরঙ্গা!

নিরন্ন থেকে নির্বস্ত্র
হর দুখ ত্রিরঙ্গা!
স্লোগান থেকে স্তোত্র
হর মুখ ত্রিরঙ্গা!

পুঁজিবাদ থেকে কাস্ত্রো
হর বাদ ত্রিরঙ্গা!
দ্রোণ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র
হর সাধ ত্রিরঙ্গা!

আক্রমনের মুখে নিরস্ত্র
হর মূক ত্রিরঙ্গা!
ক্ষুধার - সান্ত্বনা এক মাত্র
হর ভুখ ত্রিরঙ্গা!

পবিত্র থেকে অপবিত্র
হর জান ত্রিরঙ্গা!
গোমাংস থেকে গোমূত্র
হর খান ত্রিরঙ্গা!

স্বপ্নের নীলে ষড়যন্ত্র
হর ডরপুক ত্রিরঙ্গা!
চুইয়ে পড়া জল-সত্র
হর বুরবুক ত্রিরঙ্গা!

টমেটোর লালে, রকেট তন্ত্র
হর সাল ত্রিরঙ্গা!
শুকনো গালেও, চুম্বন চিত্র
হর গাল ত্রিরঙ্গা!


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট, কোথায় ছিলেন গান্ধীজী?

১৫০/বি বেলেঘাটা মেন রোড। শিয়ালদহ স্টেশন ও ই-এম বাইপাস এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন কারী মূল রাস্তা - বেলেঘাটা মেন রোড তথা সুরেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের ওপর পড়া এই বিশেষ ঠিকানা টি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্মৃতির সাক্ষ্য বহন করছে । বিশেষ করে, প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় আসন্ন হলে, এই ঠিকানার কথা স্মরণ না করে থাকা যা য় না। কারণ ১৯৪৭ এ গোটা দেশ যখন স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত, বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিতে স্বাধীনতা লাভের (১৫ ই আগস্ট) দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে আয়োজিত হয়েছে অভূতপূর্ব রাজকীয় সমারোহের - যার শুভ সূচনা হয়েছে, ১৪ ই আগস্টের মধ্যরাতে; ১৫ তারিখ পদার্পণ করতেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়ে শুভারম্ভ হয়েছে স্বাধীনতা দিবস পালনের মহা নির্ঘণ্ট। এই উচ্ছ্বাস যদিও কাঙ্ক্ষিতই ছিল। কারণ দীর্ঘ ২০০ বছরের পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরেই দেশবাসীর কাছে এসে পৌঁছেছিল সে বিরল মাহেন্দ্রক্ষণ। সমাগত হয়েছিল সেই মহা মুহূর্ত যখন প্রায় শত বর্ষ ধরে চলা স্বাধীনতাকামী মহাযজ্ঞে মুক্তিলাভের সিদ্ধি স্পর্শ করছিল তার চূড়ান্ত শিখর দেশ। কিন্তু এই যজ...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...