সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ঋষি সুনাক পেরেছেঃ বিবেক রামস্বামীর প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ কতটা মসৃণ?

আগস্টের ১৯ তারিখ, সকালবেলা; যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ভিত্তিক সংবাদপত্র ‘দি হিল’ এর পাতায় প্রকাশিত একটা খবরে যাকে বলে বিস্ময়ের প্রায় বিস্ফোরণ ঘটে যেতে দেখা গেল বিশ্ব জুড়ে। আমেরিকার আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন - ২০২৪ উপলক্ষে, মার্কিন Grand Old Party - রিপাবলিকানদের তরফ থেকে উঠে আসা সম্ভাব্য প্রার্থীদের উপর করা সর্বশেষ এক সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় খবরটিতে এবং তার জেরে ফাঁস হয়ে যায় সে দেশের রাজনৈতিক কর্মপন্থা ঠিক করার অন্যতম Super কমিটি (PAC) - 'Never Back Down' এর সভায় নেওয়া একটা গোপন রণনীতির কথাও। সে কথায় একটু পরে আসছি। বিস্ময়ের মূল কারণটা আসলে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় একজনের খুব দ্রুত গতিতে সমর্থকদের প্রিয় হয়ে ওঠার চমকদার তথ্যের মধ্যে নিহিত। খবরটা প্রকাশিত হওয়ার এক দিন বাদে তাই দেখা গেল, এই খবরের উপরে ভিত্তি করে ছোট বড় বিভিন্ন প্রতিবেদনের একেবারে জোয়ার লেগে গেল ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে।

কিন্তু, ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম কেন? কারণ এই বিস্ময়ের উৎসে থাকা ব্যক্তিটি - একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুবক, যার নাম বিবেক গণপতি রামস্বামী। খবরে প্রকাশ, মাত্র ৩৯ বছর বয়স্ক এই তরতাজা আমেরিকান শিল্পপতি, সবাইকে পেছনে ফেলে, রিপাবলিকানদের পছন্দের প্রেসিডেন্ট পদ প্রার্থী হিসেবে দ্রুত উঠে আসছেন তালিকার শীর্ষে। তার সামনে এখন শুধু প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়া অন্য কেউ নেই। সমীক্ষাটি চালায় Emerson College Poll  ‘দি হিল’ এর খবরে প্রকাশিত ওই সমীক্ষার রেজাল্টে দেখা যাচ্ছে, জুন মাসে তৃতীয় স্থানে থাকা বিবেকের সমর্থন  ২% থেকে বেড়ে মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে সম্প্রতি নেওয়া স্যাম্পেলে গিয়ে পৌঁছেছে ১০% এ। আর তখন দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস ২১% থেকে নেমে, পৌঁছেছেন ১১% নীচে অর্থাৎ ১০% - এ। যার ফলে পছন্দের তালিকায় বিবেকের সঙ্গে কোনোরকমে যুগ্ম দ্বিতীয় হিসেবেই টিকিয়ে রাখতে পেরেছেন তিনি তার নাম। প্রথম স্থানে থাকা ট্রাম্প যদিও ৫৬% সমর্থন নিয়ে এই প্রতিযোগিতায় বাকি সবার থেকে অনেকটাই এগিয়ে। তাহলে ভারতীয় মিডিয়া, বিবেক রামস্বামীকে নিয়ে এখনই কেন এত উদ্বাহু নৃত্য করা শুরু করেছে ? দিল্লি তো বহুত দূরই মনে হচ্ছে। তারপরে এবারের নির্বাচনে, রিপাবলিকান প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে বিবেক ছাড়াও আরও দু জন রয়েছেন - যারা ভারতীয় বংশোদ্ভূত! একজন নিকি হ্যালি, এবং অন্যজন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার - হর্ষ বর্ধন সিং। শিখ পরিবারে জন্ম নেওয়া নিকি, আমেরিকার রাজনীতিতে আবার বেশ পরিচিত মুখ। ২০১১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর ছিলেন। তাহলে বিবেকের মধ্যে বিশেষ কি আছে যে তার সম্পর্কে এখনই এত আশাবাদী হয়ে উঠছে সবাই। আমেরিকার মহা উদ্যোগপতি ইলন মাস্ক বিবেকের সম্পর্কে উৎসাহ দেখিয়েছেন বলে? সম্প্রতি মাস্ক, সাংবাদিক তাকার কার্লসনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিবেকের সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেছেন, "Very promising'! কিন্তু সেটাই, বিবেকের সম্পর্কে ভারতীয় মিডিয়ার এত উৎসাহী হয়ে ওঠার একমাত্র কারণ নয়। বর্তমানে, রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার দৌড়ে, বিবেক ঠিক যার পেছনে রয়েছেন, সেই এক এবং অদ্বিতীয়, রিপাবলিকানদের প্রথম পছন্দ ডোনাল্ড ট্রাম্পের কি শেষ পর্যন্ত লড়াই থেকে ছিটকে যাওয়ার কোনো ক্ষীণতম সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে মিডিয়া?

হোয়াইট হাউসের প্রাক্তন অধীশ্বর ট্রাম্প, ইতিমধ্যে তিন তিনবার অভিযুক্ত হয়েছেন আর্থিক কেলেঙ্কারি সহ ২০২০ র নির্বাচনের ফলাফলকে নিজের দিকে নিয়ে আসার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার মত গম্ভীর অভিযোগে। তার বিরুদ্ধে ইম্পিচমেন্ট হয়েছে দুবার। এবং শেষ নির্বাচনে তিনি ছিলেন আক্ষরিক অর্থেই হেরো প্রার্থী। আমেরিকায় একটা কথা এখন খুব আলোচিত হচ্ছে, যে ট্রাম্পের রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে বরং নিজের ক্লাবে গলফ খেলায় মনোনিবেশ করা উচিৎ। শুধু তাই নয়, বিতর্কিত এবং অনেকের কাছে 'বিষাক্ত' রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পুরো আমেরিকা জুড়েই একরকম জনরব শোনা যাচ্ছে, "This time Trump can't win!" কিন্তু ট্রাম্প নিজে কি মনে করেন বিবেক সম্পর্কে? এই প্রশ্নের উত্তরটা কিন্তু বেশ স্বস্তিদায়ক বিবেকের পক্ষে। রাজনীতিতে বহিরাগত বিবেক, ট্রাম্পের কাছে "Outsider candidate" হলেও শোনা যাচ্ছে ইতিমধ্যে তিনি ট্রাম্পের মনে তাঁর সম্পর্কে যথেষ্ট সহানুভূতি জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। সর্বোপরি যে বিষয়টা বিবেককে অন্যদের থেকে অধিকতর আকর্ষণীয় করে তুলেছে সেটা হল তাঁর ডাউন টু দা আর্থ প্রচার কৌশল, যা কেবল সংখ্যাতত্ত্ব নির্ভর নয়, বরং ভীষণ ভোটার-মুখী। হাভার্ডের স্নাতক এবং Yale Law School এর Juris Doctor (JD), বিবেক যেন একটা টাটকা হাওয়ার আমদানি করেছেন এবারের আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে। তিনি যেটা করছেন সেটা হল, বেশি বেশি করে সাধারন ভোটারদের সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করে তাকে যথাযথ ভাবে তুলে ধরছেন এবং চেষ্টা করছেন তার সঠিক সমাধাণের পথ বাতলে দিতে। জোর দিচ্ছেন বাক-স্বাধীনতার উপরে, চাইছেন কর্ম সংস্কৃতি ফেরাতে, সব কিছু নিয়ে বিবেকের উপর সাধারন মার্কিন নাগরিক থেকে শুরু করে রিপাবলিকান সমর্থকদের আস্থা বেড়েই চলেছে যত দিন যাচ্ছে। 'দি হিল' এর রিপোর্ট অনুসারে, বিবেকের এই রকেটসম উত্থানের কারণ হিসেবে স্নাতকোত্তর শ্রেনীর একটা বড় অংশ এবং ৩৫ এর নীচে থাকা যুবক সম্প্রদায়ের সমর্থন কাজ করছে বলে দাবী করা হয়েছে। এর পাশাপাশি যোগ হয়েছে বিপুল সংখ্যক আমেরিকাপ্রবাসী ভারতীয়দের সক্রিয় সমর্থন।

 সূত্র অনুসারে, এবারের নির্বাচনে আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয়রা বিবেককেই এগিয়ে রাখছেন পরবর্তী রিপাবলিকান রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়ে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, অন্য দুজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত রিপাবলিকান প্রার্থী, নিকি হ্যালি এবং হর্ষ বর্ধন সিং কে সমীক্ষার ফলাফলে সেভাবে উঠে আসতে দেখা যাচ্ছে না। তাহলে কি শেষমেশ শিকে ছিঁড়তে পারে বিবেকের কপালে? এই প্রশ্ন মিলিয়ন ডলারের। তামিল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম বিবেক, এখনো স্ত্রী অপূর্বা তিওয়ারি রামস্বামী এবং দুই পুত্র কার্ত্তিক ও অর্জুনকে নিয়ে বছরে একবার হলেও তামিলনাড়ুতে আসেন নিজের শেকড়ের সঙ্গে একাত্ম হতে। তামিল ভাষায় অনর্গল, বিবেক ইতিমধ্যে লিখে ফেলেছেন Work, Inc, Kindle Edition এর মত বাণিজ্যসফল বই। গড়ে তুলেছেন বায়োটেকনোলজি ফার্ম Roivant Sciences.  এবার পালা - বিশ্বের শীর্ষ শক্তিধর দেশের শীর্ষ প্রশাসনিক চেয়ারে বসার। কিন্তু তাঁর এই লড়াই, ভবিষ্যতে কতটা সফল হবে তাই নিয়ে আলোর অন্য দিকটাও দেখা দরকার। সেটা কি? ইতিমধ্যে বিবেকের রিপাবলিকান প্রতিপক্ষরা বিবেকের এই উত্থানটাকে প্রায় অশনি সংকেত হিসেবেই ধরে নিয়েছে। সুপার PAC - Never Back Down এর সভায় নেওয়া গোপন রণকৌশল, যেটার ফাঁস হয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলাম লেখার শুরুতেই, তা হল "Take a sledgehammer to Vivek" অর্থাৎ বিবেকের এই লড়াইকে কোনোভাবে ফোকলা করে দিতে হবে। ইতিমধ্যে তাঁর নামের আগে ফেক কথাটা জুড়ে জনমানসে তাঁর সম্পর্কে একটা হেও ভাব তৈরি করার চেষ্টা শুরু হয়ে গেছে। ইজরায়েল পন্থী রিপাবলিকানদের কাছ থেকে বিবেককে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে এই বলে যে বিবেক  ইজরায়েলকে ২০২৮ অব্দি সমস্ত সাহায্য প্রদান বন্ধ করার পক্ষে। কিন্তু তাতেও দমবার পাত্র নন, আমেরিকান মুদ্রায় ৬০০ মিলিয়ণেরও বেশী সম্পদের মালিক এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত।
এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে, রাজা তৃতীয় চার্লসের আমন্ত্রন পেয়েছিলেন ভারতীয় হিন্দু - ঋষি সুনাক; তারিখটা ছিল ২৫ শে অক্টোবর, ২০২২, যেদিন পূর্ববর্তী লিজ ত্রুসের হাত থেকে তাঁর হাতে অর্পিত হয়েছিল ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীত্বের দায়িত্ব। আগামী দিনে বিবেক রামস্বামী কি ঋষি সুনাকের দেখানো পথে হাঁটতে পারবেন? ইংল্যান্ড শাসনের যে গৌরব অর্জন করা সম্ভব হয়েছে ঋষি সুনাকের হাত ধরে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিসেবে বিবেক রামস্বামী কি আমেরিকা শাসনের স্বপ্ন সফল করতে পারবেন? সময় এর উত্তর দেবে। 




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট, কোথায় ছিলেন গান্ধীজী?

১৫০/বি বেলেঘাটা মেন রোড। শিয়ালদহ স্টেশন ও ই-এম বাইপাস এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন কারী মূল রাস্তা - বেলেঘাটা মেন রোড তথা সুরেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের ওপর পড়া এই বিশেষ ঠিকানা টি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্মৃতির সাক্ষ্য বহন করছে । বিশেষ করে, প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় আসন্ন হলে, এই ঠিকানার কথা স্মরণ না করে থাকা যা য় না। কারণ ১৯৪৭ এ গোটা দেশ যখন স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত, বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিতে স্বাধীনতা লাভের (১৫ ই আগস্ট) দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে আয়োজিত হয়েছে অভূতপূর্ব রাজকীয় সমারোহের - যার শুভ সূচনা হয়েছে, ১৪ ই আগস্টের মধ্যরাতে; ১৫ তারিখ পদার্পণ করতেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়ে শুভারম্ভ হয়েছে স্বাধীনতা দিবস পালনের মহা নির্ঘণ্ট। এই উচ্ছ্বাস যদিও কাঙ্ক্ষিতই ছিল। কারণ দীর্ঘ ২০০ বছরের পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরেই দেশবাসীর কাছে এসে পৌঁছেছিল সে বিরল মাহেন্দ্রক্ষণ। সমাগত হয়েছিল সেই মহা মুহূর্ত যখন প্রায় শত বর্ষ ধরে চলা স্বাধীনতাকামী মহাযজ্ঞে মুক্তিলাভের সিদ্ধি স্পর্শ করছিল তার চূড়ান্ত শিখর দেশ। কিন্তু এই যজ...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...