সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নিদারুন সমাপতন, সমরেশ বসু এবং রামকিঙ্করের মৃত্যুতেও!

সাহিত্যিক সমরেশ বসু, শিল্পী রামকিঙ্কর বেজের জীবন আয়নায় দেখতে চেয়েছিলেন নিজের জীবনকে নিজের জীবনের পাওয়া আঘাত গুলোকে রামকিঙ্করের জীবনের আঘাত গুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে চেয়েছিলেন, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে।  কারণ সমরেশ বসু আর রামকিঙ্কর বেজ দুজনেরই প্রাথমিক জীবন ছিল দারিদ্র্য ক্লিষ্ট।  দুজনেই ছিলেন মধ্যবিত্ত ভণ্ডামির কাছে অসহায় যদিও জীবন যুদ্ধে তাঁরা কেউই পলাতক সৈন্য ছিলেন না  স্ব স্ব ক্ষেত্রে সফল এই দুজনের জীবনেই বিতর্কের ঢেউ বয়ে যেত কারণে অকারণে

তাই কিদেশসম্পাদক সাগরময় ঘোষের কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর না করেননি সমরেশ বসু? এ কথা ঠিক জহুরী সাগরময় ঘোষও জহর চিনতে ভুল করেননি। সঠিক ভাবেই তিনি চিনেছেলেন সমরেশের অবচেতনের মধ্যে বসে থাকা আহত রামকিঙ্করকে তাই দেশিকোত্তম পুরস্কারে ভূষিত ভাস্কর তথা চিত্রশিল্পী রামকিঙ্করের জীবনের ওপর উপন্যাস লেখার প্রশ্নে সমরেশ কেই তিনি রেখেছিলেন তাঁর বিবেচনার শীর্ষে
সমরেশ বসু তারপরে দীর্ঘ দশ বছর লাগিয়ে দেন, শিল্পী রামকিঙ্কর কে পুরোপুরি আবিষ্কার করতে
এখানে একটু বলে নেওয়া ভালো যখন সমরেশ লেখা শুরু করার ব্যাপারে মনস্থির করেছেন তখন রামকিঙ্কর বেঁচেছিলেন রামকিঙ্করকে বুঝতে, সমরেশ বসু বহু বার ছুটে গেছেন শান্তিনিকেতনে কিন্তু সবসময় যে খুব সহজে তা করতে পেরেছেন তা কিন্তু নয়  প্রথম বারেই রামকিঙ্করের সঙ্গে দেখা করতে শান্তিনিকেতনে গিয়ে পড়েছিলেন মহা ফাঁপড়ে  কারণ রামকিঙ্কর প্রথমে তাঁকে পাত্তাই দিতে চাননি আর দেবেনই বা কেন! তিনি তখন সমরেশ বসুর কোনো লেখা পড়া তো দূরে থাক তাঁর নাম পর্যন্ত শোনেননি অগত্যা সাগরগময় ঘোষ চিঠি লিখলেন রামকিঙ্করকে চিঠি পেয়ে সমরেশ কে সহযোগিতা করতে রাজি হলেন বটে, কিন্তু সমরেশ যেতে তাঁকে পরিষ্কার বলে দিলেন - মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হবে না হলে তিনি মুখ খুলবেন না


আনন্দ পাবলিশার্স প্রকাশিত বাংলা সাহিত্যের প্রথম জীবনোপন্যাস  ‘দেখি নাই ফিরের প্রথম সংস্করণের ভূমিকা তে সে কথা সবিস্তারে লিখেছেন সাগরময় ঘোষ “মাঝখানে কিছু লোক বিগড়ে দিয়েছে এই সরল মানুষটিকে।  তারা বুঝিয়েছে আনন্দবাজার সংস্থা হোল বুর্জোয়া।  আপনার জীবন নিয়ে সেখানে লিখবে সমরেশ।  অতএব আপনি এর জন্যে মোটা টাকা দাবি করুন
তারপরেই সাগরময় লিখছেন, “টাকার কোনো চাহিদা রামকিঙ্করের ছিল না।  টাকা দিলে সেটা যে তাঁর হাতে থাকবেনা সেটাও জানা কথা।"  কিন্তু যেটা হোল
, রামকিঙ্কর  শেষ পর্যন্ত অনড় থাকলেন তাঁর সিদ্ধান্তে  
অন্য দিকে শুধু মাত্র টাকার প্রশ্নে শেষ মুহূর্তে লক্ষ থেকে সরে আসা নিয়ে সমরেশ বসুর ছিল ঘোরতর অনিচ্ছা।  কারণ তাঁর ভাবনায়  রামকিঙ্কর যে শুধুই  গত 'শতাব্দীর একজন বড় শিল্পী' ছিলেন তাই নয় তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন  রামকিঙ্করের জীবনের সঙ্গে ‘প্রচুর নাটকীয়তা, অসম্ভব বিশ্বাস আর অবিরাম সংগ্রাম' এর ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে।
যার আকর্ষণে তিনি তখন প্রায় ভূতে পাওয়ার মতো করে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন রামকিঙ্করের বিস্ময়াকীর্ণ জীবন আলেখ্যকে শব্দ দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে। এই প্রসঙ্গে বলে নিই, সমরেশের কাছ থেকে কথা বলার দক্ষিণা বাবদ দু লাখ টাকা নেন রামকিঙ্করের পক্ষে তাঁর ভাইপো দিবাকর বেজ। দিবাকরকে টাকা দেওয়ার কথা সমরেশ জানান সাগরময় ঘোষ কে লেখা একটি চিঠিতে।।
প্রথমে ঠিক হয় দুটো বৈঠকের জন্য সময় দেবেন রামকিঙ্কর।  কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সমরেশের নিষ্ঠা এবং তাঁর প্রবল অনুসন্ধিৎসা দেখে এতটাই অনুরক্ত হয়ে পড়েছিলেন যে পরে কোনোরকম শর্ত বা আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই তাঁর সঙ্গে কথা বলতে রাজী হয়ে যান তিনি।  বলেছিলেন  “যতবার খুশি, যতক্ষণ  দরকার আমি বসবো, যত কথা জানতে চাও আমি বলবো।"  কিন্তু শুধুই কি মুগ্ধতা? নাকি সমরেশের মধ্যে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছিলেন রামকিঙ্কর? 
এই প্রতিচ্ছবি দেখার প্রশ্নে প্রখ্যাত চিত্র শিল্পী বিকাশ ভট্টাচার্য ও একইরকম অনুভব করতেন।  পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপ্ত শিল্পী বিকাশ ভট্টাচার্যের সেই প্রথম অলংকরণের কাজে হাত দেওয়া।  ‘দেশ’ সম্পাদক সাগরময় ঘোষের কাছ থেকে ‘দেখি নাই ফিরে’ র অলংকরণের প্রস্তাব আসার পরে তাঁর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল অগ্রজ শিল্পী রামকিঙ্করের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধায় মোড়া। দুবারের জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী বিকাশ ভট্টাচার্য কাজটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছিলেন। “কিঙ্করদার মত এই শতাব্দীর একজন শ্রেষ্ঠ শিল্পীর জীবন নিয়ে আমাদের দেশে প্রথম এই ধরনের একটা কাজ হচ্ছে, আমি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলাম।" 
শিল্পী হিসেবে বিকাশ বাবুর ছিল সুগভীর অন্তর দৃষ্টি। তাঁর বর্ণনায় সুন্দর ভাবে উঠে আসে একদিকে শিল্পী রামকিঙ্কর এবং অন্যদিকে তাঁর জীবন চিত্রকে শব্দ দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে চাওয়া লেখক সমরেশের মধ্যেকার দুর্দান্ত মিল থাকার কথা। ‘দেখি নাই ফিরে’ র ভূমিকায় সাগরময় ঘোষ সে কথার উল্লেখ করেছেন বিকাশ ভট্টাচার্যের উদ্ধৃতি দিয়ে। কিন্তু কি বলেছিলেন শিল্পী বিকাশ ভট্টাচার্য? সেটা জানার আগে আমার মনে হয় সম্পাদক সাগরময় ঘোষ ঠিক কোন প্রেক্ষিতে বিষয়টিকে উত্থাপন করতে বাধ্য হয়েছিলেন সেটা জেনে নেওয়া জরুরী।   
প্রকৃত পক্ষে রামকিঙ্কর এবং সমরেশের জীবনের নানা দিক যে একই রেখায় এসে সমাপতিত হয়ে পড়ে সে ব্যাপারে সম্পাদক সাগরময় ঘোষের মনে কোনো সন্দেহ ছিল না। সেই কারণেই তিনি রামকিঙ্করের জীবনোপন্যাস লেখার প্রশ্নে লেখক সমরেশ বসুকেই বেছে নিয়েছিলেন সর্বাগ্রে। এই নিয়ে সাগরময় ঘোষ ভূমিকাতে লিখছেন, “রামকিঙ্কর এক বিস্ময়।  বিস্ময় কি কেবল এই কারণেই? আমার মনে হয় রামকিঙ্করের মধ্যে আপন প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছিলেন সমরেশ।" এরপরেই সাগরময় তাঁর মন্তব্যের নেপথ্যে যে যে যুক্তি রয়েছে তার উল্লেখ করেন একে একে।  তাঁর মতে সমরেশ বসু ছিলেন গত  “শতাব্দীর বঙ্গ সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক”। কিন্তু তা সত্ত্বেও সমরেশ কে সহ্য করতে হয়েছে নিন্দা মন্দ, পড়তে হয়েছে প্রবল বিরোধিতার মুখে।  সাগরময়ের মতে, “রামকিঙ্করের মতো সমরেশকেও এই মধ্যবিত্তিয় ভণ্ডামি আঘাত করেছে নির্মম ভাবে।" “রামকিঙ্করের মতোই অপমান, লাঞ্ছনায় হার মানেননি সমরেশ। একদা লড়াই করেছেন দারিদ্র্যের সঙ্গে।  রামকিঙ্কর যেমন শিল্পকে সমরেশ তেমনি সাহিত্যকেই একমাত্র অবলম্বন করে লড়াই করে গিয়েছেন যা একালের আর কোনো লেখক করতে পারেননি।"  “তাই রামকিঙ্করের মধ্যেই সমরেশ খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁর মনের মানুষকে, বোধহয় নিজেকেও!”


সাগরময় ঘোষ ছিলেন বাংলা সাহিত্য-পত্রিকার জগতে সর্বকালীন সেরা সম্পাদকদের মধ্যে অন্যতম। এবং সত্যি বলতে কি, সমরেশ এবং রামকিঙ্করের সম্পর্কে কথা বলার সবথেকে বড় স্টেক হোল্ডার ও বোধহয় তিনিই ছিলেন।  কারণ রামকিঙ্কর এবং সমরেশ দুজনকেই সাগরময় ঘোষ দেখেছেন খুব কাছ থেকে। এবং রামকিঙ্করের জীবনের ওপরে উপন্যাস লেখার ভাবনাটাও তাঁরই মস্তিষ্ক প্রসূত। সবথেকে বড় কথা, দুজন সফল স্রষ্টার সৃষ্টির ক্ষেত্র বা  মাধ্যম আলাদা হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের সৃষ্টির নেপথ্যে থাকা জটিল রসায়ন কে যেভাবে তিনি একই অভিপ্রায়ের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন তা এককথায় অতুলনীয়।  যার ফলে সৃষ্টি হয়েছিল ‘দেখি নাই ফিরে’র মত ধ্রুব উপন্যাসের। 
সাহিত্যের আকাশে 'দেখি নাই ফিরে' র মতো দিক চিহ্ন রচনাকারী উপন্যাসের সফল রূপায়নের পেছনে থাকা সম্পাদক সাগরময় ঘোষের তাগিদ এবং প্রচেষ্টার কথা তাই চিরকাল গৌরবের সঙ্গে স্মরণ করবে বাংলার কোটি কোটি সাহিত্যানুরাগী মানুষ।
আর সাগরময়ের পরে যদি কেউ এই ব্যাপারে কথা বলার অধিকারী হন তাহলে তিনি চিত্রশিল্পী বিকাশ ভট্টাচার্য।  তিনিও সাহিত্য ও শিল্প ক্ষেত্রের এই দুই মহারথীকে লক্ষ করেছেন খুব নিকট থেকে। এই ব্যাপারে তাঁর অভিমত আবার সাগরময়কেও ছাড়িয়ে যায়। তিনি এমনকি তাঁদের শারীরিক গঠনেও খুঁজে পেয়েছিলেন বেশ কিছু অবাক করার মতো মিল।  তাঁর কথায়, “দুজনের মধ্যে ছিল সমান প্যাশন, ভিগার, ও দৃপ্ত পৌরুষ”।  “দেখেছি দুজনেরই মাথার আকার সমান। দুজনেরই প্রিমিটিভ ওয়াইল্ড হেড। দুজনেরই সহজ সুস্পষ্ট হাঁসি।"  
যারা বিকাশ ভট্টাচার্যের অলংকরণ দেখেছেন তাঁরা উপলব্ধি করতে পারবেন উপন্যাসে আঁকা রামকিঙ্করের ছবিতে কিভাবে দিনে দিনে সমরেশের মুখাবয়ব ফুটে উঠছিল।  বিকাশ ভট্টাচার্য কখনও জল রং, কখনও তেল রং আবার কখনও দুটো মিশিয়ে, রামকিঙ্কর রূপী সমরেশকেই ফুটিয়ে তুলছিলেন যেন উপন্যাসের পাতায় পাতায়।  কিন্তু কেন, কেনই বা দুজনের মুখের আদল এক হয়ে যাচ্ছিলো ক্রমশ?  সম্পাদক সাগরময় ঘোষের প্রশ্নের মুখে বিকাশ ভট্টাচার্য অকপটে বলেছিলেন তাঁর উপলব্ধির কথা। “লেখার মধ্যে রামকিঙ্করের জীবন আর সমরেশের আত্মস্মৃতিচারণ অভিন্ন হয়ে যাচ্ছিলো তাই আমি বদলে দিচ্ছিলাম মুখাবয়ব।"
বিকাশ ভট্টাচার্যের পরিকল্পনা ছিল আস্তে আস্তে 'রামকিঙ্করের মধ্যে পুরো সমরেশের আদল’ মিশিয়ে দেওয়ার।  কিন্তু বাদ সাধল নিয়তি।  ‘দেখি নাই ফিরে’ সম্পূর্ণ হোল না।  তার আগেই চির বিদায় নিলেন ‘দেখি নাই ফিরে’র লেখক সমরেশ বসু।  যদি দেখা যায় রামকিঙ্করও একই ভাবে  সমরেশকে বলা তাঁর জীবনের কথা অসমাপ্ত রেখেই চলে গেছিলেন ১৯৮০ র ২রা আগস্ট। সেরিব্রাল থ্রম্বসিসের ছোবলে রামকিঙ্করের চির বিদায় নেওয়ার ঘটনা যতটা বিপাকে ফেলেছিল সমরেশ কে, ১৯৮৮ এর ১২ই মার্চের দিনে সমরেশ বসুর অকাল প্রয়ানও কম বিপদে ফেলেনি ‘দেশ’ এর সম্পাদক সাগরময় ঘোষকে।  কারণ ‘দেশ’ এর পাতায় তখন উপন্যাসের ৬৪ টি পর্ব প্রকাশিত হয়ে গেছে। পরের পর্ব অর্থাৎ ৬৫ তম পর্বের অপেক্ষায় রয়েছেন সম্পাদক সহ লক্ষ লক্ষ উপন্যাসে মজে যাওয়া পাঠক। এমন সময়ে চলে গেলেন সমরেশ বসু,।  অসমাপ্ত থেকে গেল ‘দেখি নাই ফিরে’।   যেভাবে রামকিঙ্কর তার জীবনের কথা অসমাপ্ত রেখে চলে গেছিলেন, সমরেশ বসুও রামকিঙ্করের জীবনালেখ্য লিখতে গিয়ে শেষ করে যেতে পারলেন না। কি নিদারুন সমাপতন। 


ঋণ স্বীকার ঃ- আনন্দ পাবলিশার্স প্রকাশিত 'দেখি নাই ফিরে' র প্রথম সংস্করণ (প্রকাশ কাল - ১লা জানুয়ারী, ১৯৯২)

সমরেশ বসুর সম্পর্কে আরও লেখা পড়ুন ঃ
বিজ্ঞাপন লেখকের সংশয় সত্যি হোল, সমরেশের জীবনে! 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট, কোথায় ছিলেন গান্ধীজী?

১৫০/বি বেলেঘাটা মেন রোড। শিয়ালদহ স্টেশন ও ই-এম বাইপাস এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন কারী মূল রাস্তা - বেলেঘাটা মেন রোড তথা সুরেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের ওপর পড়া এই বিশেষ ঠিকানা টি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্মৃতির সাক্ষ্য বহন করছে । বিশেষ করে, প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় আসন্ন হলে, এই ঠিকানার কথা স্মরণ না করে থাকা যা য় না। কারণ ১৯৪৭ এ গোটা দেশ যখন স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত, বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিতে স্বাধীনতা লাভের (১৫ ই আগস্ট) দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে আয়োজিত হয়েছে অভূতপূর্ব রাজকীয় সমারোহের - যার শুভ সূচনা হয়েছে, ১৪ ই আগস্টের মধ্যরাতে; ১৫ তারিখ পদার্পণ করতেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়ে শুভারম্ভ হয়েছে স্বাধীনতা দিবস পালনের মহা নির্ঘণ্ট। এই উচ্ছ্বাস যদিও কাঙ্ক্ষিতই ছিল। কারণ দীর্ঘ ২০০ বছরের পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরেই দেশবাসীর কাছে এসে পৌঁছেছিল সে বিরল মাহেন্দ্রক্ষণ। সমাগত হয়েছিল সেই মহা মুহূর্ত যখন প্রায় শত বর্ষ ধরে চলা স্বাধীনতাকামী মহাযজ্ঞে মুক্তিলাভের সিদ্ধি স্পর্শ করছিল তার চূড়ান্ত শিখর দেশ। কিন্তু এই যজ...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...