প্রাক্তন আমলা, বর্তমানে নরেন্দ্র মোদী ক্যাবিনেটের বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্করের কাজটা কি কিছুটা সহজ হয়ে গেল? বিশেষ করে ইতালির সঙ্গে ভারতের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের প্রশ্নে? বলা হচ্ছে, দুই দেশের মধ্যে বর্তমান সম্পর্ককে আরো নিবিড় করার লক্ষে জয়শঙ্করকে সম্ভবত খুব বেশি কূটনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা দেখানোর প্রয়োজন লাগবে না। তার কারণ, দুই দেশের বর্তমান দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যেকার ব্যক্তিগত সম্পর্কের রসায়ন। প্রচলিত একটা কথা আছে- মিয়াঁ বিবি রাজি তো কেয়া করেগা কাজী। এক্ষেত্রে ভারত এবং ইতালি দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীই যখন তাদের সম্পর্কের উৎকর্ষ সাধনে এক সাথে গলা সাধছেন, ‘মিলে সুর মেরা তুমহারা’, তখন আগামী দিনে কে আটকাবে নরেন্দ্র মোদীকে বিশ্বগুরুর পদে অভিষিক্ত হওয়া থেকে?
একটা গুঞ্জন যেটা প্রথমে শুধু কূটনৈতিক মহলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, বর্তমানে তা সোশাল মিডিয়ায় প্রায় বৃন্দ গানে
পরিনত হয়েছে; যার মূলে রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ইতালির নব
নির্বাচিত মহিলা প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্কের
রসায়ন থেকে উঠে আসা চমকপ্রদ, নতুন একটা শব্দ ‘মেলোডি’ কে কেন্দ্র করে; ৪৬ বছর বয়সী ইতালির প্রধানমন্ত্রী এবং ৭৩
এ পা দেওয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পদবী যথাক্রমে মেলোনি আর মোদী মিলে তৈরি হওয়া এই
‘মেলোডি’ এখন নেটপাড়ায় প্রায় ঝড় তোলা চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত বছর অর্থাৎ ২০২২ এর ২২ শে অক্টোবর তারিখে Brothers of Italy পার্টির তরুন
নেত্রী জর্জিয়া মেলোনি সে দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ইতালির প্রধানমন্ত্রীত্বের আসনে চিরকাল পুরুষদেরই
জয়জয়কার। আর সেই দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা প্রথায় সর্বপ্রথম ছেদ ফেলা জর্জিয়া শুধু এই
কারনেই যে বিশ্বের তাবড় তাবড় রাষ্ট্রনেতাদের কাছে কৌতূহলের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন
তা কিন্তু নয়, তাঁর উচ্ছলতায় ভরা দীপ্ত সৌন্দর্যও তাঁকে খুব তাড়াতাড়ি সকলের আগ্রহের
কেন্দ্রে নিয়ে চলে এসেছিল। জর্জিয়ার অনুরাগীর তালিকায় কে নেই, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি
জো বাইডেন থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক। সবাই।
কিন্তু জর্জিয়ার সঙ্গে এই অনুরাগ পর্বে নতুন একটা কোনের উদ্ভব হতে দেখা গেল জর্জিয়া মেলোনির
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, প্রথমবার ভারত সফরে আসার পরে। জর্জিয়া ভারত সফরে আসেন চলতি
বছরের (২০২৩) মার্চ মাসে, শুরুর দিকে। রাইসিনা হিলসের রাষ্ট্রপতি ভবনে যান এবং দেখা
করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে। দ্বি পাক্ষিক বৈঠক হয় প্রধানমন্ত্রী
নরেন্দ্রে মোদীর সঙ্গেও। ফলপ্রসু বৈঠকের পরে, প্রেসের কাছে মোদীর ভূয়সী প্রশংসা
করে মেলোনি বলেন, “The most loved leader in the world.” তখনই দুই দেশের কূটনৈতিক মহলে এই দুই রাষ্ট্র নেতার সম্পর্ক নিয়ে দুধে জ্বাল
দেওয়া শুরু হয়েগেছিল। আসলে বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, ইতালি যেমন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ভুক্ত দেশ গুলির উপর
তার রাজনৈতিক প্রভুত্ব কায়েম করতে চায় এবং এই সূত্রে প্রধানমন্ত্রী মেলোনি চান না, কোনোভাবে তাঁর এই নেতৃত্ব দেওয়ার গৌরব হাতছাড়া হয়ে যাক। একই
ভাবে ভারতও, বিশ্ব রাজনীতিতে তার নতুন দোসর ইতালিকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্বের বুকে নতুন
পাওয়ার সেন্টার হয়ে ওঠার লক্ষে যথেষ্ট আগ্রাসী মনোভাব পোষণ করে; পেতে চায় রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য পদ।
পারস্পরিক এই বোঝাপড়ার মধ্যেই সম্প্রতি
সেপ্টেম্বরের ৯ তারিখে, দিল্লীতে শুরু হয় দু দিনের, ১৮ তম G20 শীর্ষ সম্মেলন। সদস্য দেশ হিসেবে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি
সম্মেলনে যোগ দিতে আসেন, দিল্লীতে। সম্মেলন স্থল ভারত মণ্ডপমের রেড কার্পেটে দাঁড়িয়ে
স্বাগত করমর্দন করতে উপস্থিত সম্মেলনের সভাপতি দেশ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র
মোদী যে ভাবে জর্জিয়া মেলোনিকে অভিবাদন জানালেন, দেখা গেল করমর্দনরত দুই রাষ্ট্রনেতা
যেন পৃথিবীর দুই সেরা আনন্দের উৎসমুখ, মিলিত হতেই হাঁসি আর কলতানে মুখর হয়ে উঠল
চারিদিক। ঘন ঘন ফটো ফ্ল্যাশের সামনে যেন
সেই করমর্দন শেষ হয়েও শেষ হতে চায় না। গুজবে কান দেওয়া উচিৎ নয় জেনেও সবাই বলা শুরু করে দিল জ্বাল দেওয়া দুধ এবারে জমে ক্ষীর।
আর সেই ক্ষীরের কিছুটা হলেও আস্বাদন করা গেল সেপ্টেম্বরের ১৭ তারিখে, যে দিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৭২ বছর পূর্ণ করে পা দিলেন ৭৩ বছরে। যথারীতি জন্মদিনের শুভেচ্ছায় ভরে গেল প্রধানমন্ত্রীর ইনবক্স। কিন্তু সম্ভবত সেরা শুভেচ্ছা পত্রটি এল সেই ‘আদরনীয়’ মেলোনির কাছ থেকেই। মেলোনি তাঁর টুইটার হ্যাণ্ডেলে বার্থডে বয় নরেন্দ্র মোদীকে ট্যাগ করে যে পোস্ট লিখলেন তাতে মোদীকে dear friend হিসেবে সম্বোধন করে বললেন, "Happy Birthday Wishes @narendramodi. A friend committed to building the future and proud of the history of a great nation close to Italy." পরিবর্তে, নরেন্দ্র মোদীও জর্জিয়া মেলোনিকে জানালেন অভিনন্দন, দিলেন অকুণ্ঠ ধন্যবাদ। এক পোস্টে মেলোনিকে ট্যাগ করে তিনি লিখলেন, "Thank you for your wishes PM @GiorgiaMeloni." বিদগ্ধজনেরা বলছেন পিকচার আভি বাকি হ্যায়, এ তো জাস্ট এক ট্রেলার হ্যায়।
ইতিমধ্যে শোনা যাচ্ছে, জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে যে ত্রিকোণ তৈরি হয়েছিল জো বাইডেন এবং নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে, সম্প্রতি শেষ হওয়া G20 সামিটের শেষে নাকি বাইডেনের মেলোনিকে নিয়ে যাবতীয় উৎসাহে জল পড়ে গেছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন