সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হে ভগা! বিপক্ষে যখন ভগবান!

হে- কথাটায় যতটা সমর্পিত ভাব রয়েছে, ভগা' মধ্যে ততটাই খিল্লি তবে ভগা, মানে ভগবান এতটাই শক্তিশালী যে তার সম্পর্কে ওইরকম হালকা, চাটনি মার্কা কথা বলে তাকে হিলানো সম্ভব নয় একদমই তবে উপায় কি!

ভক্তরা কিন্তু এইটুকুতেই কোমরে গামছা কষে ফেলবেন না যেন মনে রাখবেন, যুগে যুগে যেমন ভগবদানুরাগীরা ছিলেন, ভগবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করার লোকও তেমনি কিছু কম ছিল না তবে নাস্তিকদের কথা আলাদা ভগবানের অস্তিত্বেই যারা বিশ্বাস করে না তাদের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো দলের মধ্যেই ফেলা যায় না

আসলে লড়াই তারাই করে, যারা তার অস্তিত্ব কে কায়মনোবাক্যে স্বীকার করে

তবে যুদ্ধ করবো বলে, তবে রে ভগা - 'লে তেড়ে গেলেই তো আর হয় না! তার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি চাই

'ওহ মাই গড' ছবিতে পরেশ রাওয়াল! 

আজ থেকে ১৩ বছর আগে, ২০১২ সালে 'ওহ মাই গড' বলে একটা হিন্দি সিনেমা, দারুন শোরগোল ফেলে দিয়েছিল চারিদিকে; কারণ ওর যে মূল চরিত্র - একজন গুজরাটি ব্যবসায়ী, তিনি একদিন কোর্টে উপস্থিত হন মামলা করতে; চমকপ্রদ ভাবে, তিনি তাঁর মামলার প্রতিপক্ষ হিসেবে স্বয়ং ভগবানকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চান! কি বিপদ দেখুন! কোনোও উকিলই তার পক্ষে দাঁড়াতে চান না খুব স্বাভাবিক ভগবানের বিরুদ্ধে সওয়াল করা তো আর যে সে ব্যাপার নয় গল্পটি অস্ট্রেলিয়ান একটি সিনেমার অনুপ্রেরণায় তৈরি হয়েছিল The Man Who Sued The God

খোদ গুজরাটে 'কাঞ্জি বিরুদ্ধ কাঞ্জি' নামের একটি নাটক হয়েছিল এই একই গল্পের আধারে

প্রসঙ্গত আমি কর্মসূত্রে তখন, নদীয়ার পলাশীপাড়ায় তা তখনো মফস্বল গুলোতে, সিনেমা হল বলে বস্তুটি একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায় নি, এখনকার মতো সিনেমাটির প্রিভিউ পড়েছিলাম, বেশ আকর্ষিত করার মত বিষয় তাই হলে আসার প্রথম দিনেই দেখতে চলে গিয়েছিলাম স্থানীয় তেহট্টের একটি প্রেক্ষাগৃহে

যাই হোক, অনেকেই হয়তো দেখেছেন আমি দু বার দেখেছি যারা দেখেননি, তাদের জন্যে ছোট করে কয়েক লাইনে একটু বলে নেই, তাহলে পরের কথায় যেতে সুবিধে হবে

গল্পের ব্যবসায়ীটি, যার একটি অ্যান্টিক মূর্তির দোকান ছিল শহরে; একদিন এক মৃদু ভূমিকম্পের কবলে 'ড়ে, তা সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়ে উল্লেখ্য এই ব্যাবসায়ী, কাঞ্জি লালজি মেহতা চরিত্রটি বেশ মজাদার পুরানো দেবদবতার মূর্তি বিক্রি করলেও স্বভাবে নাস্তিক টাইপের চরিত্রটিতে, প্রখ্যাত চরিত্রাভিনেতা পরেশ রাওয়াল এর অভিনয় সত্যিই ভোলার নয় মিঠুন চক্রবর্তী, অক্ষয় কুমার সহ আরোও অনেকে ছিলেন ছবিতে

স্বাভাবিক ভাবে, কাঞ্জিলাল দোকানের ক্ষতিপূরণ পেতে ইন্সিউরেন্স দপ্তরের দ্বারস্থ হন গোল বাধে সেখানেই বিমা অফিস থেকে পরিস্কার জানিয়ে দেওয়া হয়, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে কোনোরকম আর্থিক ক্ষতিপূরণ বিমা কোম্পানি দেবে না কারণ এটি একটি অ্যাক্ট অফ গড কেস, যা গোদা বাংলায় বললে ভগবান দ্বারা কৃত কর্ম, যেটা কিনা বিমা কভারেজের আওতায় পড়ে না কিন্তু কাঞ্জিলাল ছাড়বার পাত্র নন ভগবান করেছেন বলে, নিরুপায় হয়ে শুধু কপাল চাপড়েই ক্ষান্ত হবেন এমন বান্দা তিনি নন তাই ভগবানের বিরুদ্ধেই মামলা

গেল আগস্টের (২০২৫) ২৪ তারিখ রাত্রে, ছত্তিশগড়ের দুর্গ অঞ্চলের একটি জৈন মন্দিরে, প্রণামি বাক্স ভেঙে টাকা পয়সা বার করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে এক এইড্স পজিটিভ পেশেন্ট ৪৫ বছরের এই চোর ইতিমধ্যে প্রায় ১০টি মতো মন্দিরের প্রণামি বাক্স ভেঙে চুরি করেছে বলে পুলিশের জেরায় স্বীকার করেছে সে

টাইমস্ অব ইন্ডিয়ার সাংবাদিক রেশমি ড্রোলিয়াকে এই কেসের তদন্তকারী পুলিশ অফিসার বিজয় আগরওয়াল জানিয়েছেন, রীতিমতো এই চোর একটি মোটরসাইকেল কিনেছিল, যেটায় সওয়ারি হয়ে সে সে যেত চুরি করতে পুরোদস্তুর মুখ ঢেকে পেশাদার চোরের মত মন্দিরে মন্দিরে প্রণামি বাক্স থেকে প্রণামি অর্থ চুরি করতো তবে মূর্তির গায়ে থাকা অলংকারে হাত দিত না কখনো কোর্ট তাকে ১৪দিনের পুলিশ হেফাজত দিয়েছে

ঘটনাচক্রে চোর যার নাম ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কারনে সংবাদে প্রকাশিত হয়নি, ২০১২ সালে অন্য আর একটি কেসে জেলে থাকাকালীন, এইড্স আক্রান্ত হয় এবং আশ্চর্যজনক ভাবে, তার এই এইচ আই ভি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে, ভগবানের হাত রয়েছে বলে তাকে বলা হয় মানে সেই একই - অ্যাক্ট অফ গড আর এইখানেই সমাপতন

কারণ, সেই চোর জানিয়েছে ভগবানের বিরুদ্ধে শোধ তুলতেই সে পরিকল্পিত ভাবে দেবালয় গুলোতে চুরি করার কাজ করেছে

ভাবুন একবার, খবরের রূপকথা কাকে বলে



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন; যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় হয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে; মাত্র চার বছর বয়সে পড়া - যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি তিনি মুক্ত হতে; ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন, ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইনের কথা - সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘ...

জনগণমনঃ জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার ইতিহাস ও কিছু প্রশ্নের উত্তর!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ব্রহ্ম সঙ্গীত ‘ জনগণমন অধিনায়ক’ কে দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মান্যতা দেওয়ার সর্ব সম্মীলিত সিদ্ধান্ত হয় ১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি । কিন্তু কেন এত দেরী? দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও কেন তিন বছর সময় লেগেছিল জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করতে? ‘ভারত বিধাতা’ শিরোনামে লেখা, স্বদেশ পর্যায় ভুক্ত (গীতবিতান অনুসারে) এই রবীন্দ্রগীতিটি কিভাবে -  দেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার পথে একটু একটু করে এগিয়ে গেল! ‘জনগনমন’র জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনীই আজ আমরা ফিরে দেখবো এই প্রবন্ধে।  ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট - দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরে অবশেষে দেশবাসীর ভাগ্যাকাশে এসে উপস্থিত হোল বহু আকাঙ্খিত সেই দিনটি। উদিত হোল স্বাধীনতার নতুন সূর্যের।   স্বাধীন হোল দেশ। কিন্তু সদ্য ব্রিটিশ অধীনতা মুক্ত দুটি দেশ ভারত এবং পাকিস্থান তখনও পায় নি স্বতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা। ১৯৪৭ এর ১৮ই জুলাই তারিখে লাগু হওয়া ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুসারে নিজ নিজ সংবিধান প্রণয়নের আগে পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্থান এই দুটি ভূখণ্ড কমনওয়েলথ দেশের অধীনস্থ দুটি অধিরাজ্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারা...