অতীতের দিনে, বড় বড় রাজা মহারাজাদের মাথায় ছাতা ধরার জন্য লোক থাকতো। বড় পোস্ট। রাজছত্র ধরার জন্য কোনো এলিতেলি লোককে তো আর নিযুক্ত করা যায় না। সমাজে তাদের আদর কদরও কিছু কম ছিল না। যেমন কেউ ডাক্তার হলে তাকে ডাক্তার অমুক বা ইঞ্জিনিয়ার হলে ইঞ্জিনিয়ার তমুক বলে ডাকার রীতি রয়েছে, তেমনি কোনো রামধন বার্মা যদি ছাতা ধরার কাজ করতেন তো সম্মান করে তাকে ছত্রধর রামধন বলে ডাকার চল ছিল। এমনকি অনেক বাবা মা নিজের ছেলেপুলের নাম পর্যন্ত আদর করে ছত্রধর রাখতেন। ভাবুন, গরিমা খানা! আধুনিক সময়ে, মানবাধিকার সংগঠনের তাড়া খেয়ে ছাতা ধরার পোস্ট চিরতরে উঠে গেছে। কারণ রাজা মহারাজারা এখন গণতান্ত্রিক হয়ে পড়েছেন। তাই নিজের ছাতা এখন নিজেকেই ধরতে হয়।
টুপি আবিষ্কার হয়েছিল কবে কে জানে, তবে মনে হয় ছত্রধর পোস্ট বিলুপ্ত হওয়ার পরেই মাথা বাঁচাবার জন্য টুপি পরার চল শুরু হয়েছিল। কারণ ছাতা এবং টুপি ব্যবহারের সালতামামী যদি তুলনা করে দেখা যায়, তবে টুপি প্রচলনের গল্প কিছু ৭০০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দের, সেখানে ছাতার আবির্ভাব অনেক প্রাচীন। সেই মহাভারতের যুগের। কথিত আছে, জমদগ্নি নামে এক দক্ষ ধনুর্ধর নাকি, সূর্যের প্রচণ্ড তাপে অতিষ্ঠ তাঁর স্ত্রী রেণুকার কষ্টে এতটাই কাতর হয়ে পড়েছিলেন যে স্বয়ং সূর্যকেই তিনি ধ্বংস করে দিতে উদ্যত হন এবং তৎক্ষণাৎ সূর্যকে লক্ষ করে মারক বাণ নিক্ষেপের উপক্রম করেন। তাতে সূর্যদেব ভীষণ ভয় পেয়ে যান এবং জমদগ্নির স্ত্রী রেণুকাকে একটি ছাতা প্রদান করে তাকে খুশী করার চেষ্টা করেন। কিন্তু আজকের গল্পটি টুপি বা ছাতা আবিষ্কারের সময়কাল নিয়ে নয় বরং টুপি পরা নিয়ে যে প্রচলিত রসিকতাটি চালু রয়েছে বাজারে, তার প্রতিকার হিসেবে এক অভিনব উদ্ভাবনকে কেন্দ্র করে।
কারণ, টুপি পরা – এই শব্দবন্ধের মধ্যে যে কথিত টিপ্পনিটি লুকিয়ে রয়েছে
তাতে টুপি পরা আর বোকা বনে যাওয়া - এই দুইয়ের মধ্যে আর কোনো প্রভেদ নেই।
সেই কারণে, টুপি পরা ব্যক্তিকে আর আজকাল কেউ বুদ্ধিমান মানতে চায় না। তাই শুধুশুধু কে আর টুপি পরে বোকা বনতে চায়! অতঃ টুপি পরা চলবে না। কিন্তু টুপি পরা বন্ধ হলে, হাতে আর থাকবে কি! প্রবল রোদ থেকে বাঁচতে কি তাহলে ওই ছাতাতেই ফিরে যেতে হবে পুনরায়! তবু বৃষ্টিতে রেইনকোট চলে, কিন্তু রোদে তো আর রেইনকোট পরা যায় না।
কিন্তু, যে ব্যক্তি ঘুরে ঘুরে আম পোড়া আমের শরবত বিক্রি করছেন, বলা ভালো ফেরি করছেন তিনি কি করবেন!
তার মাথা এবং সম্মান দুটোই বাঁচবে যদি ছাতাকে কোনোরকম ভাবে মাথার সঙ্গে বেঁধে রাখা যায়। ব্যাস্ কেল্লাফতে। শিয়ালদহ স্টেশন চত্ত্বরে,, দুপুরের চড়া রোদের মধ্যেই দিব্যি ঘুরে ঘুরে আমের শরবত বিক্রি করতে আর কোনো অসুবিধা নেই।
দুটো স্টিলের ক্যান দু হাতে ধরা, একটায় বরফ ফেলা আম চটকানো রেডি শরবত আর একটায় প্লাস্টিকের গ্লাস, মগ, ইত্যাদি করে অন্যান্য জিনিসপত্র। ছাতা ধরবে কে! টুপি পরার প্রশ্নই নেই।
আমি আবার একটু কায়দা করে, বললাম বাহ্ আপনার মাথায় তো বেশ সুন্দর ছাতা পোঁতা রয়েছে। উনি তখন তার মাথায় থাকা ওই রঙচঙে ছাতাটাকে আলতো করে সামনের থেকে তুলে দেখালেন, ওরে বাব্বা, বেশ আঁটোসাঁটো রক্ষণ ব্যবস্থা কিন্তু। কপালে একেবারে ফেটি বাঁধার মতো একটা বাঁধন দেওয়া রয়েছে ছাতাটা যাতে মাথার ওপরে টানটান দাঁড়িয়ে থাকে। ব্যাস, দিব্যি ছত্রমস্তক টুপিওয়ালা হয়ে ঘুরে বেড়ানো যায় চারিদিকে। না থাকে কোনো ছত্রধর নিযুক্তির প্রয়োজন, না টুপি পরে বোকা সাজার বিড়ম্বনা!
উঁহু, দেখলে হবে খরচা আছে।




মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন