সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

একটি পাখির মৃত্যু!

ভোটাধিকার নেই তো কি হয়েছে, পাখি বলে কি মানুষ নয়? তাও দেশী চড়ুই, শালিক হতো এক কথা। সেই কোথায় দক্ষিণ আমেরিকার অ্যামাজন জঙ্গলে এদের বাস; কত রাস্তা পেরিয়ে, তবে সুদূর ভারতে আসে, পোষ্য হতে! অতিথি হিসেবেও তো একটা আলাদা গুরুত্ব থাকে নাকি। তারপরে আবার ভিনদেশী অতিথি বলে কথা! 

সম্প্রতি, সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে বিপন্ন প্রজাতি হওয়ার তকমাও জুটেছে এদের কপালে।এমনিতেই এই নীল হলুদ রঙের ম্যাকাও পাখি গুলি, তাদের প্রবল সৌন্দর্যের কারণে পক্ষী সমাজে বেশ কুলীন বলেই বিবেচিত; সেখানে যদি কোনো ম্যাকাওর এমন বেঘোরে প্রাণ যায় তো কার শোক হবে না বলুনএক্ষেত্রে তো আবার, মৃত্যুর পেছনে চিকিৎসায় গাফিলতি থাকার অভিযোগ। তাই ধুন্ধুমার! থানা পুলিশ, এমনকি লোকাল এম পি' হস্তক্ষেপ পর্যন্ত ঘটতে দেখা গেল সম্প্রতি এই আমেরিকান কাকাতুয়ার মৃত্যুকে ঘিরে !

ঘটনাটি, খোদ কোলকাতা শহরের। গত ৬/১১/২৫ তারিখে, টাইমস্ অব ইন্ডিয়ার ভেতরের পাতায় এই সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদনটি তাই বেশ চাঞ্চল্যকর।
খবর অনুযায়ী, বেহালা নিবাসী ব্যবসায়ী রাহুল চক্রবর্তী, পুলিশের কাছে যে অভিযোগ করেছেন, তাতে তার পোষা নীল ম্যাকাওর মৃত্যুর পেছনে রহস্য রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে
গত তিরিশে অক্টোবর তারিখে, রাহুল বাবু তার অসুস্থ ম্যাকাওকে নিয়ে মুদিয়ালির এক ভেটেরিনারি ক্লিনিকে আসেন দেখাতে। সামান্য পেটের সমস্যা ছিল বলে, রাহুল বাবু জানিয়েছেন, টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাংবাদিক সার্থক গাঙ্গুলী এবং দ্বৈপায়ন ঘোষের কাছে। চিকিৎসক অবশ্য সার্জারি করার কথা বলেন। রাহুল বাবু যথারীতি, ডাক্তারের পরামর্শ মতো অপারেশনের খরচ বাবদ অর্ধেক টাকা (১২,৫০০) অগ্রীম জমা করে দেন। তিনদিন পরে, (সোমবার, নভেম্বর /২০২৫) তাঁকে ক্লিনিকে আসতে বলা হয় পুনরায়।

এসে অবশ্য শোনেন, পাখিটি আর বেঁচে নেই; প্রান পাখি, ইতিমধ্যে খাঁচা ছাড়া হয়ে গেছে।এরপরে, ঘটনাটি যথারীতি অন্যদিকে মোড় নেয়। রাহুল বাবু এবং তাঁর সঙ্গী, ম্যাকাওর মৃত্যুর পেছনে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ আনেন, এবং মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করার দাবী জানান।
কিন্তু ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ, কিছুতেই ম্যাকাওর মৃতদেহ রাহুল বাবুদের হাতে তুলে দিতে রাজি হয় না। এতেই গোল বাঁধে। উল্টে, ক্লিনিকের মালিক বরুন কাজারিয়া অভব্য আচরণ করেন বলে অভিযোগ।

নিরুপায় হয়ে রাহুল বাবু, স্থানীয় সাংসদ মালা রায়ের দ্বারস্থ হলে পরিস্থিতি অন্য দিকে মোচড় নেয়। সংবাদে প্রকাশ, দক্ষিণ কোলকাতার সাংসদ, শ্রীমতী মালা রায়ের আবেদনে পর্যন্ত কর্ণপাত করেনি ওই ক্লিনিকের মালিক। ফলস্বরূপ, পুলিশ - ক্লিনিকের অউনার বরুন কাজারিয়াকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয় বলে খবর। শেষপর্যন্ত যদিও, ম্যাকাওর মৃতদেহ, পরীক্ষার জন্যে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে
কিন্তু ম্যাচ তো একতরফা হওয়ার নয়, বরুন কাজারিয়াও রাহুল চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ক্লিনিক ভাঙচুরের নালিশ ঠুকে দিয়েছেন পুলিশের কাছে।

পুলিশ অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।

এমত অবস্থায়, মৃত ম্যাকাও পাখিটির বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করা ছাড়া আর উপায় কি।

সোনালী বুকওয়ালা, এই নীল ডানার ম্যাকাও পাখিটি যদিও এই সব থেকে এখন সম্পূর্ণ মুক্ত 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন; যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় হয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে; মাত্র চার বছর বয়সে পড়া - যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি তিনি মুক্ত হতে; ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন, ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইনের কথা - সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘ...

জনগণমনঃ জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার ইতিহাস ও কিছু প্রশ্নের উত্তর!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ব্রহ্ম সঙ্গীত ‘ জনগণমন অধিনায়ক’ কে দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মান্যতা দেওয়ার সর্ব সম্মীলিত সিদ্ধান্ত হয় ১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি । কিন্তু কেন এত দেরী? দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও কেন তিন বছর সময় লেগেছিল জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করতে? ‘ভারত বিধাতা’ শিরোনামে লেখা, স্বদেশ পর্যায় ভুক্ত (গীতবিতান অনুসারে) এই রবীন্দ্রগীতিটি কিভাবে -  দেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার পথে একটু একটু করে এগিয়ে গেল! ‘জনগনমন’র জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনীই আজ আমরা ফিরে দেখবো এই প্রবন্ধে।  ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট - দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরে অবশেষে দেশবাসীর ভাগ্যাকাশে এসে উপস্থিত হোল বহু আকাঙ্খিত সেই দিনটি। উদিত হোল স্বাধীনতার নতুন সূর্যের।   স্বাধীন হোল দেশ। কিন্তু সদ্য ব্রিটিশ অধীনতা মুক্ত দুটি দেশ ভারত এবং পাকিস্থান তখনও পায় নি স্বতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা। ১৯৪৭ এর ১৮ই জুলাই তারিখে লাগু হওয়া ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুসারে নিজ নিজ সংবিধান প্রণয়নের আগে পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্থান এই দুটি ভূখণ্ড কমনওয়েলথ দেশের অধীনস্থ দুটি অধিরাজ্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারা...