ধূমপায়ীদের কাছে অগ্নিসংযোগ একটি অতি অপরিহার্য বিষয়। কিন্তু পল্টুদা নিজে সে দায় নিতে চান না। তিনি বলেন,
আমি রজনীকান্ত নই,
যে টাকেও দেশলাই কাঠি ঘষে আগুন জ্বালিয়ে নেবো। কেউ সামনে আগুন ধরালে তবে তিনি সুখটান দেবেন নইলে নয়। দোকানের সামনে আগুন দেওয়া নারকেল দড়ির বিনুনি ঝুলছে,
পল্টুদা সেইটুকু তুলে,
বিড়ির মুখে ধরবেন না। সার্থক অর্থেই,
পলটুদা একজন ঠোঁট চুরুটে লোক ।
কারণ খেজুর শুধু গোঁফের ওপর পড়লেই তো আর হয় না;
মুখের মধ্যে ঢুকতে গেলে,
হালকা একটু পরকীয়া চাই। তেযনি ঠোঁটে বিড়ি গুঁজে রাখলেই তো আর হয় না,
চাই আগুনের ছেঁকা। কিন্তু কে দেবে!
তাই পল্টুদার, কে আগুন করিবেক দান - ডাক।
এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে,
ছোটবেলায় দেখেছি হুকোর কল্কেতে আগুন ধরানোর জন্যে লম্বা লম্বা খড় পাকিয়ে বেণীর মতো বানানো হোত,
তার মুখে আগুন জ্বালা থাকতো,
সেটাকে আঞ্চলিক ভাবে বেণিয়া বলা হোত। এখন তার চল উঠে গেছে।
হেমন্তের সন্ধ্যে গুলো যেন একটু বেশি ঘনিষ্ঠতা খোঁজে। হালকা হিমেল হাওয়া,
বুড়ো আর বাচ্চাদের মাথায় রংবেরঙের মাংকি টুপি। আর অবশ্যই পাতার পিঠে,
সারারাত ধরে চলা শিশিরের টাপুরি গানের আসর। এইরকম দিনে পল্টুদা আবার কবিদের খুব কষে গালাগালি দেন। কি কবিতার ছিরি,
সিগারেট তুমি শ্বেত পরী
না ছাই!
হিম্মত থাকলে বিড়ি নিয়ে লিখে দেখাক না। কে বোঝাবে পল্টুদাকে,
বিড়ি নিয়েও কম লেখা হয়নি। আসলে সিগারেট পল্টুদার শ্রেণী শত্রু। দুনিয়ার ধূমপায়ী এক হও নাকি পল্টুদার মতে বুর্জোয়া শ্লোগান। বোঝো ঠেলা।
গ্রামে নবান্নের তোড়জোড় চলে এইসময়,
মাঠ থেকে পাকা ধান,
বিড়া বেঁধে আসবে,
তাই লেপা পোছা চলে চাষী বাড়ির উঠোনে। খালপাড়ের চায়ের দোকানে ব’সে পল্টুদার লেকচার বন্ধ হয় না। ঠোঁটে বিরামহীন গোঁজা থাকে বিড়ি ।
এদিকে কথা বলার খেয়ালে,
বারবার
বিড়ি নিভে যায়,
তখন কথা থামিয়ে
- দে দে একটু আগুন দে বলে চিৎকার শুরু করে দেন পল্টুদা। বিরক্ত হলেই শুনিয়ে দেবেন,
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় কি বলেছিলেন। শোন্,
বিড়ি হলো সত্যিকারের প্রেমিকা,
আদর্শ
; তাই তো এত অভিমানী। একটু অন্যদিকে মন গেলেই ওর গোঁসা,
নিভে যায় সটান। বিড়ি কে জাগিয়ে রাখতে গেলে তাই বারবার চুমু খেতে হয়।
পল্টুদার ঠোঁট, বিড়ির ছ্যাঁকা খেতে খেতে কালো পড়ে গেছে। একেবারে টপ টু বটম, খাওয়া চাই। তবু কেউ একটা সিগারেট অফার করলেও নেবে না। বলে কি, আমি তো কোন ছাড়, কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়, কত বড় মানুষ, ১৯৯১ এ জ্ঞানপীঠ পুরষ্কার পেলেন, তাও তিনি বললেন, পুরস্কারের টাকায় কয়েকদিনের বেশ বিড়ি জুটে যাবে। কই সিগারেটের কথা তো বলতে পারতেন তিনি। বললেন না!

.jpg)


মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন