সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শক্তির 'অভিমানী প্রেমিকা'!

কই, আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও.... আমার বিড়ির মুখে। যাকে বলে, পুরো পুলক জাগানো প্যারেডি। রবীন্দ্রনাথ নিজে, অতটাও ভাবেননি; কালে কালে বিড়িখোররাও যে বিড়ি ধরাতে গিয়ে তাঁর গান গেয়ে আগুন চাইতে পারে, সেটা নিশ্চয়ই তাঁর কল্পনার বাইরে ছিল। এদিকে পল্টুদা, দিব্যি ঠোঁটের কোনায় একটা বিড়ি গুঁজে, দাঁড়িয়ে রয়েছেন বুক চিতিয়ে; ভাবখানা এমন যেন রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে নতুন কোনো দিশা দেখালেন তিনি।  


রবীন্দ্রনাথ নিজে কখনো ধূমপান করেননি বলেই প্রচার। তবে ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবীকে লেখা একটি চিঠিতে, বেলুড় মঠে যে স্বামীজীর ছবির সামনে প্রতিদিন অম্বুরি তামাকের ভোগ দেওয়া হয় সে কথার উল্লেখ করেছেন।


রবীন্দ্রনাথ, পাঠরত।

ধূমপায়ীদের কাছে অগ্নিসংযোগ একটি অতি অপরিহার্য বিষয়। কিন্তু পল্টুদা নিজে সে দায় নিতে চান না। তিনি বলেন, আমি রজনীকান্ত নই, যে টাকেও দেশলাই কাঠি ঘষে আগুন জ্বালিয়ে নেবো। কেউ সামনে আগুন ধরালে তবে তিনি সুখটান দেবেন নইলে নয়। দোকানের সামনে আগুন দেওয়া নারকেল দড়ির বিনুনি ঝুলছে, পল্টুদা সেইটুকু তুলে, বিড়ির মুখে ধরবেন না। সার্থক অর্থেই,  পলটুদা একজন ঠোঁট চুরুটে লোক

কারণ খেজুর শুধু গোঁফের ওপর পড়লেই তো আর হয় না; মুখের মধ্যে ঢুকতে গেলে, হালকা একটু পরকীয়া চাই। তেযনি ঠোঁটে বিড়ি গুঁজে রাখলেই তো আর হয় না, চাই আগুনের ছেঁকা। কিন্তু কে দেবে! তাই পল্টুদার, কে আগুন করিবেক দান - ডাক।

এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে, ছোটবেলায় দেখেছি হুকোর কল্কেতে আগুন ধরানোর জন্যে লম্বা লম্বা খড় পাকিয়ে বেণীর মতো বানানো হোত, তার মুখে আগুন জ্বালা থাকতো, সেটাকে আঞ্চলিক ভাবে বেণিয়া বলা হোত। এখন তার চল উঠে গেছে।

হেমন্তের সন্ধ্যে গুলো যেন একটু বেশি ঘনিষ্ঠতা খোঁজে। হালকা হিমেল হাওয়া, বুড়ো আর বাচ্চাদের মাথায় রংবেরঙের মাংকি টুপি। আর অবশ্যই পাতার পিঠে, সারারাত ধরে চলা শিশিরের টাপুরি গানের আসর। এইরকম দিনে পল্টুদা আবার কবিদের খুব কষে গালাগালি দেন। কি কবিতার ছিরি, সিগারেট তুমি শ্বেত পরীনা ছাই! হিম্মত থাকলে বিড়ি নিয়ে লিখে দেখা না। কে বোঝাবে পল্টুদাকে, বিড়ি নিয়েও কম লেখা হয়নি। আসলে সিগারেট পল্টুদার শ্রেণী শত্রু। দুনিয়ার ধূমপায়ী এক হও নাকি পল্টুদার মতে বুর্জোয়া শ্লোগান। বোঝো ঠেলা।

গ্রামে নবান্নের তোড়জোড় চলে এইসময়, মাঠ থেকে পাকা ধান, বিড়া বেঁধে আসবে, তাই লেপা পোছা চলে চাষী বাড়ির উঠোনে। খালপাড়ের চায়ের দোকানে ব’সে পল্টুদার লেকচার বন্ধ হয় না। ঠোঁটে বিরামহীন গোঁজা থাকে বিড়ি


কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়

এদিকে কথা বলার খেয়ালে, বারবার বিড়ি নিভে যায়, তখন কথা থামিয়ে - দে দে একটু আগুন দে বলে চিৎকার শুরু করে দেন পল্টুদা। বিরক্ত হলেই শুনিয়ে দেবেন, কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় কি বলেছিলেন। শোন্, বিড়ি হলো সত্যিকারের প্রেমিকা, আদর্শ ; তাই তো এত অভিমানী। একটু অন্যদিকে মন গেলেই ওর গোঁসা, নিভে যায় সটান। বিড়ি কে জাগিয়ে রাখতে গেলে তাই বারবার চুমু খেতে হয়।

পল্টুদার ঠোঁট, বিড়ির ছ্যাঁকা খেতে খেতে কালো পড়ে গেছে। একেবারে টপ টু বটম, খাওয়া চাই। তবু কেউ একটা সিগারেট অফার করলেও নেবে না। বলে কি, আমি তো কোন ছাড়, কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়, কত বড় মানুষ, ১৯৯১ জ্ঞানপীঠ পুরষ্কার পেলেন, তাও তিনি বললেন, পুরস্কারের টাকায় কয়েকদিনের বেশ বিড়ি জুটে যাবে। কই সিগারেটের কথা তো বলতে পারতেন তিনি। বললেন না!

কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন; যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় হয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে; মাত্র চার বছর বয়সে পড়া - যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি তিনি মুক্ত হতে; ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন, ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইনের কথা - সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘ...

জনগণমনঃ জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার ইতিহাস ও কিছু প্রশ্নের উত্তর!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ব্রহ্ম সঙ্গীত ‘ জনগণমন অধিনায়ক’ কে দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মান্যতা দেওয়ার সর্ব সম্মীলিত সিদ্ধান্ত হয় ১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি । কিন্তু কেন এত দেরী? দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও কেন তিন বছর সময় লেগেছিল জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করতে? ‘ভারত বিধাতা’ শিরোনামে লেখা, স্বদেশ পর্যায় ভুক্ত (গীতবিতান অনুসারে) এই রবীন্দ্রগীতিটি কিভাবে -  দেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার পথে একটু একটু করে এগিয়ে গেল! ‘জনগনমন’র জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনীই আজ আমরা ফিরে দেখবো এই প্রবন্ধে।  ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট - দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরে অবশেষে দেশবাসীর ভাগ্যাকাশে এসে উপস্থিত হোল বহু আকাঙ্খিত সেই দিনটি। উদিত হোল স্বাধীনতার নতুন সূর্যের।   স্বাধীন হোল দেশ। কিন্তু সদ্য ব্রিটিশ অধীনতা মুক্ত দুটি দেশ ভারত এবং পাকিস্থান তখনও পায় নি স্বতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা। ১৯৪৭ এর ১৮ই জুলাই তারিখে লাগু হওয়া ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুসারে নিজ নিজ সংবিধান প্রণয়নের আগে পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্থান এই দুটি ভূখণ্ড কমনওয়েলথ দেশের অধীনস্থ দুটি অধিরাজ্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারা...