সকালে বাইরে বেরিয়ে একটুখানি এদিকে ওদিকে ঘোরার একটা ভালো দিক রয়েছে! প্রাত ভ্রমণের নামে, রাস্তার পাশে কোনো চায়ের দোকানে বেশ জমিয়ে টুঁ মারা যায়। পাকুড় গাছের ছায়ায় হয়তো - একলা একটা টি শপ। চায়ের সঙ্গে বিস্কুট, স্ন্যাকস বা এইরকম হালকা কিছু খেতে মন্দ লাগে না। ব্যস্ততার ফাঁকে একটুখানি অবসরের মস্তি। দিনগত পাপ ক্ষয়ের রুটিনে হঠাৎ যেন তালকাটার আকুলতা ঘিরে ধরে নিজেকে। ওই একটুখানি সময়ের জন্য মনে হয় যেন স্কুল পালিয়ে সিনেমা হলে ঢুকে পড়েছি। চা, সে - লিকার না দুধ, নাকি চিনি ছাড়া সব নখদর্পণে দোকানীর। রেডিওয় এফ এম চ্যানেল থেকে সম্প্রচারিত, সকালের মনচাহা গান চলে মোবাইল সেট থেকে। মান্না দে'র কন্ঠে "এ কি অপূর্ব প্রেম দিলে, বিধাতা আমায়"; কানে ঢুকতেই - মুহূর্তের মধ্যে, পরিবেশ আর মনের মধ্যে বওয়া ফুরফুরে আমেজ যেন এক বিন্দুতে এসে গড়াগড়ি খেতে শুরু করে দেয়। সত্যিই, গানের মতো অত ভালো মুড বানাতে আর কেউ পারে না!
"আরে বস্, এইরকম গান আর হবে না, এখন তো যত....." - সাধারণত, সামনে কোনো কমবয়সী চা পিপাসুকে দেখলে, দোকানী এই বহুল ব্যবহৃত ডায়ালগটা একবার অন্তত আওড়াবে তার দিকে তাকিয়ে।
সকালের খবর কাগজওয়ালা - রতন, সাইকেল একপাশে রেখে চায়ের অর্ডার দেয়। গাছের ডাল থেকে পাকা পাতা খসে পড়ে। রাস্তা দিয়ে অটো, ই- রিক্সা পো - পো করে দৌড়ে যায়।
সকালের তরুণ শীতল হাওয়া, চপল বালিকার মতো ঘোরাঘুরি করে এদিক ওদিক; কখনো পাশে- খালের কালো জলে মিহি মিহি ঢেউ তোলে, আবার কখনো কদম গাছের পাতায় লুকোচুরি খেলে। মাঝে মাঝে খুনসুটি করে, তার মিষ্টি পরশ দিয়ে যায় - চা খেতে আসা খদ্দেরদের ঘামে ভেজা গায়ে।
মুখ থেকে পড়ে যাওয়া বিস্কুটের গুঁড়োগুলো আবার, মাটি থেকে - খুঁটে খুঁটে খেতে আসে এক শালিক দম্পতি। দোকানীর মতো সেও সকলকে চিনে গেছে, তাই ভয় পেয়ে উড়ে যায় না । ইতিমধ্যে, রুটি গাড়ি এসে হাজির হয়। প্রতিদিন সকালে, রিক্সায় ক'রে - রুটি, বেকারী বিস্কুট, চিপস্ ইত্যাদি সাপ্লাই দিতে আসে। কাকভোরে, রিক্সা নিয়ে রুটি কারখানায় গিয়ে হাজির হয়, মাল বোঝাই করে বেরিয়ে পড়ে দোকানে দোকানে। এই রুটি রিক্সা গুলো একটু অন্যরকম। এমনি মালবাহী ভ্যান রিক্সা গুলোয়, চালকের পেছনে মালপত্র বয়ে নিয়ে যাওয়ার পাটাতনটি থাকে; সামনে বসে চালক তাকে টেনে নিয়ে যান। কিন্তু এতে উল্টো। এখানে পেছনে নয়, সামনে থাকে মাল রাখার সিন্দুকের মতো দেখতে টিনের বাক্সটি, তার পেছনে থাকেন চালক। অর্থাৎ চালক এখানে ঠেলার মতো করে সেই বেকারী জিনিস পত্র ভর্তি বাক্সটিকে সামনের দিকে ঠেলে নিয়ে যান। বাক্সের পেছনে থাকে দুই পাল্লা বিশিষ্ট দরজা।
সে যাই হোক, টাটকা রুটির গন্ধে ম ম করে ওঠে দোকানের সামনেটা। কাক এসে রিক্সার হ্যান্ডেলে বসে কা কা করে; আরোও সঙ্গী সাথীদের ডাকে বোধহয়। বেকারীওয়ালা তাড়া দেয়।
রোদ আস্তে,আস্তে তার আস্তিন গুটিয়ে মারমুখী হতেই টনক নড়ে। কটা বাজলো?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন